মোঃ ফিরোজ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি: “নাই টেলিফোন, নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম”—গানের এই লাইন একসময় ছিল জীবনের বাস্তব চিত্র। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মানুষের সেই চিঠির অপেক্ষা এখন শুধুই স্মৃতি। একসময় প্রিয়জনের খোঁজে ডাকপিয়নের পথ চেয়ে থাকত মানুষ, আজ সেই দৃশ্য মুছে গেছে প্রযুক্তির স্রোতে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা প্রায় হারিয়ে গেছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আর ইমেইল দখল করেছে একসময়কার হলুদ খামে মোড়ানো আবেগঘন চিঠির জায়গা। ফলে আত্রাই উপজেলা ডাকঘরসহ ২৪টি শাখা ডাকঘরে আর আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। অনেক জায়গায় লাল ডাকবাক্স এখন ধুলাবালিতে ঢাকা বা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সিংসাড়া শাখার পোস্টমাস্টার মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “সপ্তাহে কিছু সরকারি চিঠি এলেও ব্যক্তিগত চিঠি এখন প্রায় শূন্য।” একই কথা জানান নন্দনালী ডাকঘরের মো. ইকবাল সরদার, পাইকড়া ডাকঘরের শ্রী সঞ্জয় কুমার, হাট মোজাহারগঞ্জের মো. মহাসিন আলী ও মিরাটের মো. ফিরোজ শাহ। তাদের ভাষায়, “মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা সম্মানীতে সংসার চালানো কঠিন, তাই অন্য কাজও করতে হয়।”
গীতিকার ও সাহিত্যিক সালেকুল ইসলাম বলেন, “প্রযুক্তি আমাদের আবেগ কেড়ে নিয়েছে। চিঠির সেই সুবাস, সেই ভালোবাসা এখনকার বার্তায় পাওয়া যায় না। মায়ের অপেক্ষা বা প্রেয়সীর গোলাপসহ পাঠানো চিঠিগুলো এখন কেবলই গল্প।” তবে পরিবর্তনের স্রোতে টিকে থাকতে ডাক বিভাগও এখন ডিজিটাল হচ্ছে।
উপজেলা পোস্টমাস্টার মো. জালাল উদ্দিন জানান, “একসময় প্রতিদিন শত শত চিঠি আর লাখ টাকার লেনদেন হতো। এখন ব্যক্তিগত চিঠি হাতে গোনা, তবে আমরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছি। নগদসহ নানা ডিজিটাল সেবা চালু হয়েছে—মাত্র ৫ টাকায় ১ হাজার টাকা পাঠানো যায়, জীবন বীমা সুবিধাও রয়েছে।” প্রযুক্তির অগ্রগতিতে চিঠির দিন ফুরিয়েছে বটে, কিন্তু সেই লাল ডাকবাক্স আজও জাগিয়ে রাখে এক যুগের মধুর স্মৃতি।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রোকনুজ্জামান রোকন নির্বাহী সম্পাদক: ইফতেখার আলম সম্পাদক কর্তৃক উত্তর নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল: ০১৭১১-২০৮ ১৭২, ০১৮৩৪-৮৬১ ০০৭ ইমেইল: [email protected]
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ নগর