মোঃ আলফাত হোসেনঃ একদিকে দক্ষিণ জনপদের উন্নয়নের ছোঁয়া অন্যদিকে অনেক পরিবার নিঃস্ব নেই মাথা গোজার ঠাঁই। কোটি টাকার স্থাপনা গুঁড়িয়ে, উঠছে ঘুষ ও দখলের অভিযোগ — বাস্তহারা ভূমিহীন গাছতলায় আশ্রিত বেশিরভাগই পরিবার। সাতক্ষীরা শ্যামনগরে রোডস এন্ড হাইওয়ে বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানে কোটি কোটি টাকার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এ অভিযানে সরকারি সড়কের জায়গা দখল করে নির্মিত দোকানপাট, বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবন ভেঙে ফেলা হয়। অভিযানে গরীব ও ভূমিহীন পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তারা গাছতলায় বা রাস্তার ধারে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় রোডস এন্ড হাইওয়ের জায়গা দখল করে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে ওঠে। নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা এবং সেলামীর বিনিময়ে অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সরকারি জায়গায় ভবনগুলো যখন গড়ে উঠছিল তখন সবাই দেখেছে। তখন কেউ কিছু বলেনি। এখন ভাঙতে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। আবার কিছুদিন পর দেখা যাবে একই জায়গায় নতুন ভবন উঠছে।” রোডস এন্ড হাইওয়ে বিভাগের সাতক্ষীরা উপবিভাগের এক নির্বাহী প্রকৌশলী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, সরকারি জায়গা উদ্ধার করা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গণসংহতি আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার সংগঠক মোঃ আলফাত হোসেন বলেন, সড়কের পাশে আশ্রয়স্থল ও ঘর নির্মাণ করে বসাবস করে ধনীদের পাশাপাশি বেশিরভাগই পরিবার গরীব অসহায় দারিদ্র্য। দখল ও ঘুষের এই চক্র বন্ধ না হলে সরকারি অভিযান সাময়িক সমাধানই দেবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে,এবং এই উচ্ছেদ অভিযানে যাহারা ভূমিহীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে বাসস্থান ও স্থায়ীভাবে বসাবস ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, বারবার সরকারি জায়গা দখল, ঘুষের অভিযোগ এবং ব্যয়বহুল উচ্ছেদ অভিযান—এই চক্রের শেষ কোথায়?
এদিকে, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের দাবিতে তাৎক্ষণিক প্লাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় কিছু তরুণ। স্থানীয়দের দাবি, কেবল উচ্ছেদ নয়, দখলদার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা এবং ভূমিহীন বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে স্থানীয় ভূমি অফিসের অধীনে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করা হোক।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন বলেন, যদি কোন ভূমিহীন সরকারি খাস জায়গা বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করে, আমরা সেটি বিবেচনা করবো। কিন্তু তাৎক্ষণিক তাদেরকে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই।#