# বিশেষ প্রতিনিধি…………………………………………………………..
আসন্ন ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’ এই ¯েøাগানকে সামনে রেখে ১০ খাতে ১০৫ দফার উন্নয়ন প্রতিশ্রæতি দিয়ে এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। শনিবার (০৩ জুন) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করেন। খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও দুইবারের সাবেক সফল মেয়র।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। এমডিজি, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। আপনারা আরো জানেন যে, সারা বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যাত্রা আরম্ভ হয়েছে। সুতরাং বিশ্বজনীন দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আমার স্বপ্ন আমার জন্মশহর ও শহরের মানুষকে নিয়ে। একজন মেয়র হিসেবে আপনারা আমাকে দায়িত্ব দেয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। এই নগরীর সমৃদ্ধির জন্য শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর সড়ক বর্ধিতকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন, নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, অনগ্রসর জনসমষ্টির জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, নতুন নতুন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা-ইত্যাদি কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিত করে আপনাদের অধিকতর সেবা প্রদানে আমি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছি। এবার নির্বাচনে তাই আমার ঘোষণা Ñউন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান। ক্রমবর্ধমান এই শহরের নাগরিক সুবিধা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবার আমার লক্ষ্য ও অঙ্গীকার। আমার জন্মশহরে কাজের আগ্রহ ও আনন্দ পাই তারুণ্যের প্রাণস্পন্দন দেখে। এই শহরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মমুখী অনেক কারিগরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছেÑ যেখান থেকে তরুণ-তরুণীরা শিক্ষাগ্রহণ করে কর্মসংস্থানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আমি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন ও আন্তরিক। তাই উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুশাসনসমৃদ্ধ একটি মহানগর গড়ে তোলা আমার স্বপ্ন।
তিনি আরো বলেন,মহানগরীতে অবস্থিত সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় করে একটি সামগ্রিক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আমার অঙ্গীকার।
পরিবেশে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সামিল হয়ে রাজশাহী মহানগরীকে যোগ্য অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন প্রকল্পের রূপরেখার প্রতি আপনাদের সমর্থন ও অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। এই অঙ্গীকার সামনে নিয়ে আমি মেয়র পদপ্রার্থী। নিজেকে এই অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাভাজন বলে মনে করি। রাজশাহীর মহানগরীর সর্বাত্মক উন্নয়ন, পরিবেশ এবং সৌন্দর্য তার সাক্ষী। একই সঙ্গে আমার ধমনীতে বহন করি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সিপাহসালার শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের উত্তরাধিকার। আমি এই মাটিরই সন্তান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার ¯েœহধন্য এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রত্যাশা করে। আমি বিশ্বাস করি রাজশাহীবাসী উন্নয়নের পক্ষে। তাই আসুন, আমরা মতভেদ ভুলে নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হই। আগামী ২১ জুন ২০২৩ অনুষ্ঠিতব্য সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে পুনঃনির্বাচিত করে আপনিও হয়ে উঠুন মেগাসিটি বিনির্মাণ অভিযাত্রার গর্বিত অংশীদার। সকলের জন্য শুভকামনা। বিজয়ের অগ্রযাত্রায় আমরা এগিয়ে যাবো মিলিত পদক্ষেপে অনেক দূরে সমৃদ্ধির পথে।
অনুষ্ঠানে বিগত সময়ের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেগুলো হচ্ছে।
পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বীকৃতি অর্জন
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক বিভাজক, ফুটপাত, সড়কদ্বীপ ও চত্বরসমূহে ২ লক্ষাধিক নানা প্রজাতির স্থায়ী বৃক্ষ এবং ১০ লক্ষাধিক সৌন্দর্যবর্ধক হেজ জাতীয় বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এছাড়াও শীত ও বসন্তকালে নগরীর সড়ক বিভাজকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চারা রোপণের মাধ্যমে সড়কগুলো ফুলে-ফুলে সুশোভিত করা হয়। শুধুমাত্র ২০২২-২০২৩ সালের শীত মৌসুমে ২ লাখ ৫৩ হাজার নানা প্রজাতির ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০০৯, ২০১২ ও ২০২১ অর্জন, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ ও ২০২২ এবং এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্যা ইয়ার ২০১৬, বাতাসে ক্ষতিকারক ধূলিকণা ও কার্বনডাই অক্সাইড কমানোয় ডঐঙ (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) কর্তৃক বিশ্বের সেরা নগরী এবং এশিয়ার অন্যতম পরিচ্ছন্ন শহরের স্বীকৃতি অর্জন।
পরিচ্ছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
শহরকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ, দিনে ও রাতে নগরীর রাস্তাঘাট ঝাড়– দেওয়া এবং রাত্রিকালীন বর্জ্য অপসারণ করে নগরবাসীকে ঝকঝকে একটি শহর উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিনামূল্যে ডাস্টবিন প্রদান ও মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, লার্ভিসাইড ব্যবহার এবং ফগার মেশিনে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ১২টি আধুনিক সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
রাজশাহীর বিমান চত্বর থেকে বিহাস, তালাইমারি থেকে আলুপট্টি, বিলসিমলা রেলক্রসিং মোড় থেকে কাশিয়াডাঙ্গা, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাসটার্মিনাল, বিলসিমলা থেকে সিটি হার্ট পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক ও বুধপাড়া এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সপুরা থেকে পোস্টাল একাডেমি, সাগরপাড়া বটতলা থেকে রুয়েটের সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত, উপশহর-মালোপাড়া-রাণীবাজার সড়ক, মনিচত্বর থেকে জাদুঘর মোড়, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন সড়কসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, পাড়া মহল্লার অলিগলি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
চলমান রয়েছে তালাইমারি থেকে কাটাখালি পর্যন্ত ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজ। রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি নতুন রুটে ট্রেন চালু; আমের মৌসুমে আম পরিবহনের জন্য ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু, রাজশাহী-ঢাকা রুটে একাধিক ও রাজশাহী-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী-পঞ্চগড়, রাজশাহী-গোপালগঞ্জ ট্রেন চালু করা হয়েছে। রহনপুর-রাজশাহী-ঈশ্বরদী পর্যন্ত ট্রেন চালু করা হয়েছে।
ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়ন
রাজশাহী মহানগরীর ৪৩টি গোরস্থানে মাটি ভরাট, দৃষ্টিনন্দন ফটক, বাউন্ডারি ওয়াল, জানাজা শেড, ওযুখানা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২৮টি ঈদগাহের মাটি ভরাট, দৃষ্টিনন্দন ফটক, মেহরাব, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। পঞ্চবটি মহাশ্মশান ও মন্দির কমপ্লেক্সের উন্নয়ন দৃশ্যমান। উপশহরে মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে। ঈমাম ও মুয়াজ্জিনদের উৎসবভাতা প্রদান করেছে রাসিক।
বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়ন
শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণের মধ্যে দিয়ে শিশুদের চিত্তবিনোদনের নতুন দ্বার উন্মোচন। শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সংস্কার ও উন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, পদ্মা নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুইটি দৃষ্টিনন্দন সেতু ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বিচ বাইক ও বিচ চেয়ার সংযোজন, লালন শাহ পার্ক ও ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্কের উন্নয়ন করা হয়েছে।
শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান
রাজশাহীতে প্রায় ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিসিক শিল্প নগরী-২ এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে। চামড়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে। রাসিকের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে পিপিপি-র আওতায় বিভিন্ন বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই সিটি সেন্টার চালু হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নচূড়া প্লাজা। সিমলাসহ বিভিন্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ চলছে।
রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান ও মায়া হতে রাজশাহী থেকে পাবনা ঈশ্বরদী হয়ে আরিচা পর্যন্ত নৌ-রুট চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও শহরের প্রশস্ত সড়ক ও ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে নগরীতে গত ৪ বছরে অনেক নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিক্ষা
রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ৬৮ একর ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য একনেকে ১৮৬৭ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নগরীর ছোট বনগ্রাম ও বড় বনগ্রামে নতুন দুটি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও রাজশাহীতে হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজের শাখা খোলা হয়েছে। যুবকদের কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক ভকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্কুলের ভবন ও বাউন্ডারি নির্মাণ এবং ৩টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য
আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আপনাদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত শিশুদের জন্য রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও ১১টি নগর স্বাস্থ্য ও ৩টি মাতৃসদন কেন্দ্রের মাধ্যমে নগরবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে, সমন্বিত টিকাদান (ইপিআই) কার্যক্রমের টানা ১১ বার দেশসেরা এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে ২০২১ ও ২০২২ সালে দেশসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে রাসিক।
আর্তমানবতার সেবা
রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালী পৌরসভার কাপাসিয়ায় পক্ষঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) আঞ্চলিক সেন্টার প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক ১৫ বিঘা জমি দান করেছি। সিআরপি, রাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টারে বছরে প্রায় ১২ হাজার রোগী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা পাবে। ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। গত বছরে শীতার্ত মানুষের মাঝে প্রায় ১ লক্ষ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য ৫ হাজার প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয় এবং রাজশাহী মহানগরীর অসচ্ছল ও মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে।
শহর আলোকায়ন
মহানগরীর ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে হাইমাস্ট পোলে এলইডি বাতি, ৩৫ কিলোমিটার ফোর লেন সড়কে ডেকোরেটিভ পোল ও দৃষ্টিনন্দন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সড়কবাতি স্থাপন এবং ৩০টি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লা ও অলিগলির সড়কে ২২,৭৮০টি পোলে এলইডি বাতির মাধ্যমে আলোকায়ন করা হয়েছে।
করোনাকালীন সহায়তা
মহামারি করোনার সময় লক্ষাধিক মানুষকে দফায় দফায় খাদ্য ও অর্থ সহায়তা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা, করোনা আক্রান্ত গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় ঔষধ ও খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। ঐ সময় রমজান মাসে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে প্রতিদিন সহ¯্রাধিক মানুষকে ইফতারি, তৈরি খাবার ও ঈদের পূর্বে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
রামেক হাসপাতালে ৪টি অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটর উইথ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা প্রদান করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। ১২টি কেন্দ্রে বিনামূল্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, কোভিড-১৯ ভ্যাক্সসিন প্রদান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। নগরীর ২৭টি পয়েন্টে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সড়ক ও হাট-বাজারসহ সর্বত্র জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। এছাড়াও মৃতদেহ দাফন/সৎকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাসিক। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে করোনাকালে লকডাউনের সময় কাতার, ড্যানিশ, জার্মান রেডক্রসের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট রাজশাহী সিটি ইউনিট নি¤œআয়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী, অক্সিজেন, কম্বল ও ঈদ উপহার সামগ্রী প্রদান করে।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন
মুজিববর্ষে রাজশাহীতে একটি সুসজ্জিত চত্বরে দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, দ্রæত উদ্বোধন করা হবে। নগরীতে ১১টি পাবলিক টয়লেট, জনগুরুত্বপূর্ণ ৯টি স্থানে ফুটওভার ব্রিজ, শালবাগান, নওদাপাড়া ও ভদ্রা মোড়ে কাঁচাবাজার নির্মাণে দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। আরো ৫টি নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মহানগরীর সপুরা মঠপুকুর, ভদ্রা পারিজাত লেক ও কালীপুকুরের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে। গুলজারবাগ লেক, সপুরা গোরস্থান, দড়িখরবোনা, পবা নতুনপাড়া, টিকাপাড়া গোরস্থান, বুলনপুর ঈদগাহ, টিবি পুকুরের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও ২২টি জলাশয় সংরক্ষণ, সংস্কার ও সবুজায়নে নতুন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। রাজশাহী জজকোর্ট চত্বরে একটি সর্বাধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি
রাজশাহীতে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা, প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, নগরজুড়ে ক্রিকেট, ফুটবল, বক্সিং, জুডো- ক্যারাটেসহ নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও জাহানারা জামান মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও একাধিক নতুন খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজশাহীতে বাংলাদেশ ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা, সপ্তাহব্যাপী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। মহানগরীর শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে গতিশীল রাখতে পৃষ্ঠপোষকতা ও সংস্কৃতিচর্চা বৃদ্ধি করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং দেশের বিশিষ্ট গুণীজনদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
এরআগে অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক সম্ভ্রম হারানো মা-বোন, সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী শহীদ জাতীয় চারনেতাসহ আমার পিতা শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান, শহীদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের প্রতি ও তৎপরবর্তী বাংলাদেশে ২১ বছর ধরে সামরিক স্বৈরাচার, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ বিরোধী, আগুনসন্ত্রাস বিরোধী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী অসংখ্য মহৎপ্রাণের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান মঞ্চে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামানিক, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নওশের আলী,অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, ডাঃ তবিবুর রহমান শেখ, নাঈমুর হুদা রানা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তাক হোসেন,আহসানুল হক পিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মোঃ মোসাব্বিরুল ইসলাম,কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু,তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিয়া হাসান আজাদ হিমেল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ কবির সেন্টু, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, প্রচার সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোহেল, মতিহার থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার।
মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি নুরুল ইসলাম হিটলার, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, রাজশাহী চেম্বার সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলর সদস্য এ্যাড. একরামুল হক, রাজশাহী এডভোকেট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন। অনুষ্ঠানে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ক্রীড়া সহ নগরীর গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।#