মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর মান্দা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে কৃষকদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা, কর্মদক্ষতা ও আন্তরিক সেবার মাধ্যমে তিনি কৃষি উন্নয়নে রেখেছেন অসামান্য অবদান। সাধারণত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগই বেশি শোনা যায়। তবে এর ব্যতিক্রম শায়লা শারমিন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত কৃষি সেবা দিয়ে কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা।
ইতোমধ্যে মান্দার কৃষক সমাজে তিনি জনবান্ধব কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। তার যোগদানের পর মান্দা কৃষি অফিসে এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। দুর্নীতি-অনিয়মমুক্ত পরিবেশে অফিসটি রূপ নিয়েছে মডেল কৃষি অফিসে। কৃষকদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমে গিয়ে কাজের গতি বেড়েছে বহুগুণ। সরকারের বরাদ্দকৃত কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ প্রকৃত কৃষকদের যাচাই-বাছাই করে স্বচ্ছতার সাথে বিতরণ করা হচ্ছে। যোগদানের পর তিনি হাতে নিয়েছেন একাধিক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ। এর মধ্যে রয়েছে— বস্তায় আদা চাষ, রাস্তার ধার ও বসতবাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ। ধানখেতে পার্চিং পদ্ধতির প্রচলন ও মাছ চাষে উৎসাহ প্রদান।
সার ডিলারের গুদামে সারের মজুদ ও বিক্রির সময় কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ। নিয়মিত ডিলার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের দোকান মনিটরিং। অনুমান নির্ভর কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অবস্থান নিশ্চিতকরণ। তার আন্তরিক ব্যবহার, দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি ও যেকোনো অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে কৃষক থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি—সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
শায়লা শারমিনের প্রচারণায় উপজেলায় আমনখেতে পোকা দমনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ পদ্ধতি। ধানের জমিতে গাছের মরা ডাল, বাঁশের কঞ্চি বা ধঞ্চে গাছ পুঁতে দিলে পাখিরা সেখানে বসে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এতে কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই পোকা দমন সম্ভব হচ্ছে এবং উৎপাদন খরচও কমছে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কৃষক আলতাব হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তারা আমনখেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমেছে এবং উৎপাদন বেড়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, “কাজ করি দায়িত্ববোধ ও মনের ভালো লাগা থেকে। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। যেখানে যাই, সেখানকেই নিজের ঠিকানা মনে করি। আমাদের লক্ষ্য দেশের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”
মান্দা উপজেলা বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি জীবন কুমার বলেন, “শায়লা শারমিনের মতো কর্মদক্ষ কৃষি কর্মকর্তা আমি আগে দেখিনি। তিনি সবসময় কৃষকদের নিয়ে ভাবেন।”
এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “আমাদের ঘুণে ধরা সমাজে কেউ ভালো করতে গেলেই অনেকের গা জ্বলে। কৃষি কর্মকর্তার ভালো কাজই এখন অনেকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। মূলত তারাই তার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।” জনবান্ধব কার্যক্রম, স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতার কারণে শায়লা শারমিন আজ মান্দার কৃষকদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।#