বিশেষ প্রতিনিধি……………………………………………………………………….
রাজশাহীর বাঘায় ছাত্রীর সাথে অশোভন আচরনের অভিযোগ তুলে সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফাকে পিটিয়েছে বহিরাগতসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ছাত্রীর অভিভাবক।
জানা যায়, বিকাল ৩টার দিকে নবম শ্রেণির কক্ষে ক্লাস নিচ্ছিলেন সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সুন্দরবন পিকনিকে যাওয়ার কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে সুন্দরবন এলাকায় বানরের আক্রমন আছে বলে শিক্ষার্থীদের জানান গোলাম মোস্তফা। বিশেষ অঙ্গভঙ্গিমায় স্কুল ব্যাগ তুলে বানরের আক্রমনের বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে স্কুল ব্যাগের টানে এক ছাত্রীর গায়ের ওড়না সরে যায়। এতে ওই ছাত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে বিষয়টি তার অভিভাবকদের জানান। পরে তারা বাঁেশর লাঠি সোটা ও হকিস্টিক নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে আক্রমনের চেষ্টা করে। সহকারি শিক্ষকরা ওই শিক্ষককে অফিস কক্ষের ভেতরে ঢুকায়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। পরে ক্ষিপ্ত শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে এরাপাথাড়ি মারধর করে। এ সময় মাথায় ও হাতেসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। মাথায় রক্তাক্ত জখম ও ডান হাতের দুটি আংগুল ভেঙ্গে যায়। ঘটনার সময় নির্বাক ছিলেন সহকারি শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় তিনি ও প্রধান শিক্ষক উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায় ছিলেন। বিষয়টি জানার পর,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নিয়ে তারা বিদ্যালয়ে যান। এ সময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে তারা তালা ভেঙে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে এলোপাথাড়ি মারধর করে। তিনি জানান,তার এক মেয়েও নবম শ্রেণীতে পড়ে। তার মাধ্যমে ব্যাগের টানে ওড়না সরে যাওয়ার কথা জেনেছি। বিদ্যালয়ের সাবেক অভিাবক সদস্য জগলু শিকদার বলেন, এর আগেও ছাত্রীদের সাথে ওই শিক্ষকের অশোভন আচরনের বিষয় নিয়ে কয়েকবার শালিস করা হয়েছে। তার ভাষ্য,ওই শিক্ষকের আচরন ভালো নয়।
ছাত্রীর চাচা কবির মাষ্টার জানান, পিকনিকে যাওয়ার কথা বললে, হাত ধরে টেনে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি দেখাচ্ছিল। এ সময় ছাত্রী টানাটানি করলে ওড়না ছিড়ে যায়। পরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে বলে কেমন পারো মার দেখি। এতে শিক্ষার্থীরা অফিসের তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে মারধর করেছে। তিনি জানান, ছাত্রীর বড়ভাই শাহিন আলম বাদি হযে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।
প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, ঘটনার সময় বিদ্যালয়ে ছিলেন না। তবে সহকারি প্রধান শিক্ষককে অফিসের তালা ভেঙ্গে মারপিট করার বিষয়টি থানায় অবগত করেছি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, পূর্বে বিদায় অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমার উৎর আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিল। মিথ্যা অভিযোগকে পুঁজি করে বহিরাগত শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। আমি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রহিংসার শিকার হচ্ছি। কিছু লোকের জন্য বারবার লাঞ্ছিতত হতে হচ্ছে। তাদের কাছে আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
বাঘা থানার এসআই কামরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুরো ক্লাসের মধ্যে সুন্দরবনে কী দেখা যায়, তা জানতে চায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় সুন্দরবনে বাঘ, হরিণ, কুমিরের বাচ্চা ও বানর দেখা যায় এবং বানর কিভাবে আক্রমন করে বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে এক ছাত্রীর ব্যাগে টান লেঘে ওড়না সরে যায়। এ নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা বিদ্যালয়ের তালা ভেঙ্গে শিক্ষককে মারপিট করে জখম করা হয়েছে। #