বিশেষ প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘায় চাকুরির জন্য দেওয়া টাকা ফেরত না দিয়ে আত্নসাতের অভিযোগে তেঁথুলিয়া-পীরগাছা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ ও ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে ভ’ক্তভূগিরা।
সোমবার (০২জুন’২৫) সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করা হয়। তাতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৯ জনের কাছ থেকে ৪৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্যকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা সহকারি অধ্যাপক (অবঃ) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি অনেককেই চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। পরে তাদের চাকুরি দিতে ব্যর্থ হলেও ভূক্তভোগিদের টাকা ফেরত দেননি। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের এহেন কর্মকান্ড কোন ক্রমেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
তিনি দাবি করেন, যারা চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে অধ্যক্ষকে দ্বিগুন টাকা ফেরত দিতে হবে। আড়পাড়া গ্রামের ভুক্তভোগি একলাসুর রহমান বলেন, অফিস সহকারী পদে চাকরির জন্য তার সাথে ১০ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর অধ্যক্ষকে ২ লক্ষ টাকা দেন। ওই গ্রামের আবুল বাছেদ বাচ্চুকে নৈশ প্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার জন্য ৫ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়। ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর ৩ লক্ষ টাকা দেন। একই গ্রামের নাইম উদ্দীনের সাথে ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদে চাকরির জন্য ৮ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর ৩ লক্ষ টাকা দেন তিনি। তাদের দেওয়া টাকার অনুকুলে আলাদা আলাদা চেক দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ। চাকরি দিতে ব্যর্থ হলে তাকে দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়া হয়। কিন্তু টাকা ফেরত দিব বলে সুকৌশলে অধ্যক্ষ’র বাড়িতে ডেকে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক চেকের সেই পাতা ছিনিয়ে নেন অধ্যক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে আইনের আশ্রয় না নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষর ভাতিজা, ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল হক উল্টো মামলা করাসহ প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখান। পরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রাজশাহী কোর্টে মামলা করলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তার পক্ষে করে নেন অধ্যক্ষ। পরে চার জনের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় আদালতে মামলা করেন অধ্যক্ষ । সেই মামলায় বিবাদীরা নির্দোষ প্রমানিত হয়।
২০২৪ সালের ২১ আগষ্ট একলাসুর রহমানসহ ভূক্তভ’গিরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ২ সেপ্টম্বর’২৪ শুনানির ধার্য দিনে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হননি অধ্যক্ষ। ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম তার স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে ভূক্তভোগীদের যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দায়েরের অনুরোধ করেন।
অপর ভূক্তভোগী তেথুলিয়া শিকদার পাড়া গ্রামের মোরশেদ আলম বলেন,গ্রন্থাগারিক পদের জন্য ২০০৯ সালে দেড় লক্ষ টাকা দেন। ২০১০ সালে তাকে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই নিয়োগ ছিল ভ’য়া। পরে দেওয়া টাকা ফেরত চেয়েও পাননি।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন,ভ’ক্তভূগি নাইম উদ্দীনসহ আরো কয়েকজন। তারা জানান, স্থানীয়দের কাছে দেন দরবার করলে টাকা ফেরত দিচ্ছি দিব বলে, কালক্ষেপণ করেন। ভূক্তভোগীরা অধ্যক্ষকে দূর্নীতিবাজ ,টাকা আত্নসাতকারি আখ্যায়িত করে বলেন, তাদের মতো অনেকের কাছ থেকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে আত্নসাত করেছেন। তাদের দেওয়া টাকা ফেরতসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যক্ষ’র অপসারণ দাবি করেছেন।
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক এর দাবি, নেওয়া টাকা ফেরত দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৯জনের কাছ থেকে ৪৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নেওয়ার লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান ইউএনও। #