# মোঃ আব্দুল বাতেন: ভোরের অন্ধকারে হঠাৎ গর্জন শুনে ঘুম ভাঙে ইজাজ আহমেদের। বের হয়ে দেখেন, কয়েক গজ দূরের ঘরটি মুহূর্তেই পদ্মার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। একসময় যে উঠানে খেলত ছোট ভাইবোনেরা, সেখানে এখন কেবল পানির ঢেউ। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দুইবার ভাঙনের শিকার হয়ে রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী ইজাজ এখন ফুল দিয়াড়ী এলাকায় বাঁশ-তাঁতের তৈরি একটি অস্থায়ী ঘরে পরিবারের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন। “পড়াশোনা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়াবহ হতাশায় আছি। কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। সরকার যদি স্থায়ী বাঁধ না করে, তবে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না”—কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ ঝরে পড়ে তাঁর।
শিবগঞ্জের পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামে গত দুই মাসেই ৪০০ বাড়িঘর, মসজিদ, কবরস্থান, বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙনের কবলে এখনো ঝুঁকিতে হাজার খানেক পরিবার। অনেকে গবাদিপশু, আসবাবপত্র কিংবা সঞ্চয়ের কিছুই বাঁচাতে পারেননি।
দ্বোভাগী গ্রামের গৃহবধূ নাসিমা বেগম বলেন, যা ছিল সব নদী গিলে খেল। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। খাবার কই, ঘুমাবো কোথায়—কিছুই জানি না।” ভাঙনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও টিকছে না।
চরলক্ষীপুর ও হাসানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল বারী আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই স্কুলে আসতে পারছে না। বই-খাতা সব ভেসে গেছে। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শিক্ষা নষ্ট হচ্ছে।” শিবগঞ্জের অর্থনীতি টিকে আছে মূলত আম বাগান ও কৃষির ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক ভাঙনে বিলীন হয়েছে শত শত বিঘা জমি।
বাদশাহপাড়ার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের কণ্ঠে হতাশা, “আমগাছের বাগানটা ছিল শেষ ভরসা। সেটাও চলে গেল নদীতে। এখন সংসার চালাবো কী দিয়ে?” প্রশাসন বলছে, জিও ব্যাগ দিয়ে আপাতত ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭৫১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, অনুমোদন মিললেই ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের আর আশ্বাসে ভরসা নেই। মনোহরপুর গ্রামের প্রবীণ আব্দুল জলিলের কণ্ঠে ক্ষোভ!৩০ বছর ধরে শুনছি বাঁধ হবে। প্রতি বছর ভাঙন হয়, আমরা নিঃস্ব হই, আর সরকার শুধু জিও ব্যাগ ফেলে নাটক করে।
শিবগঞ্জের মানুষ আজ ভিটেমাটি হারিয়ে হাহাকার করছে। ভাঙনে শুধু ঘরবাড়ি নয়, হারাচ্ছে শিকড়, হারাচ্ছে প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। তাদের একটাই দাবি—স্থায়ী বাঁধ, যাতে অন্তত আগামী বর্ষায় আবার ভিটেমাটি নদীর গর্ভে হারিয়ে না যায়।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রোকনুজ্জামান রোকন নির্বাহী সম্পাদক: ইফতেখার আলম সম্পাদক কর্তৃক উত্তর নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল: ০১৭১১-২০৮ ১৭২, ০১৮৩৪-৮৬১ ০০৭ ইমেইল: [email protected]
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ নগর