পঞ্চগড় প্রতিনিধি: দীর্ঘ ২৩ বছরের কারাভোগ শেষে আবারও মুক্ত বাতাসে ফিরেছেন আব্দুল মাজেদ। পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এক সময়ের প্রাণচঞ্চল এই মানুষটির জীবনের গল্প এখন কেবল সংগ্রামের নামান্তর।
২০০২ সালে একটি মামলায় ৩০ বছরের সাজার আদেশ পান মাজেদ। কারাগারে থাকা অবস্থায় জীবনের দ্বিতীয় বড় ধাক্কাটি আসে—স্ত্রী সালেহা বেগম তাকে ছেড়ে চলে যান। সময় গড়াতে থাকে, কিন্তু ফিরে আসেনি সংসারের সেই হারানো ছায়া। স্ত্রী-সন্তানরা কারাগারের বাইরে আর কোনো খোঁজ নেয়নি তাঁর। বাকি সময়টুকু মায়ের ওপর নির্ভর করেই কাটে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, কারামুক্তির মাত্র ১৬ দিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মা ফুলবানু।
চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের দিনে মুক্তি পান আব্দুল মাজেদ। কিন্তু বাইরের পৃথিবী তখন তাঁর জন্য একেবারেই অপরিচিত ও শূন্য। কোনো উপার্জনের উৎস নেই, শারীরিক সামর্থ্যও নেই আগের মতো। ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে শুরু করেন চা শ্রমিকের কাজ। তবে অল্প আয় আর ভগ্নস্বাস্থ্যে সচ্ছলতা তো দূরের কথা, দিন পার করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই অসহায়তার খবর পৌঁছে যায় পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর কাছে। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নিজেই যোগাযোগ করেন আব্দুল মাজেদের সঙ্গে। পরে তাঁর পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি গরু ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমিনুল ইসলাম তারেকসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত আব্দুল মাজেদ বলেন, “কারাগার থেকে বের হয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। মাকে নিয়ে থাকতাম, তিনিও চলে গেছেন। চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করি, কিন্তু তেমন কিছু করতে পারি না। এই সহায়তা আমার নতুন জীবনের শুরু। চেষ্টা করব গরুটিকে লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হতে। আল্লাহ জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মঙ্গল করুন।”
তার প্রতিবেশী সহিদুল ইসলাম জানান,“মাজেদ ভাই অনেক কষ্ট করেছেন। এখন তাঁর কিছুই নেই। এই সহায়তা খুবই প্রয়োজন ছিল। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে তাঁর পাশে আছি।” জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, “একজন মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর কারাগারে ছিলেন। মুক্তির পর যখন দেখেন, কেউ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে না,তা খুবই হৃদয়বিদারক। আমরা চাই, তিনি নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন অসহায় মানুষের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা থাকবে।” এই সহানুভূতি যেন এক দিনের আয়োজনেই সীমাবদ্ধ না থাকে—বরং সমাজের অবহেলিত, বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে—এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।#