তানোর প্রতিনিধি………………………………………………..
রাজশাহীর তানোরে উপজেলা নির্বাচনে শুরু হয়ে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা। বর্তমান চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা ও ইফতার মাহফিলে ব্যস্ত রয়েছেন। এসব কর্মসুচির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে তার কর্মী-সমর্থকেরা। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আল-মামুন নিভৃতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও অর্জনের চিত্র তুলে ধরে ভোটারদের দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের কাছে নিজের জন্য ভোট প্রার্থনা করে নির্বাচনী প্রচারনায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে অনেকে এই নির্বাচনকে এমপির প্রেষ্টিজ ইস্যু হিসেবে দেখছে।কারণ তানোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র দুর্বল প্রার্থীর কাছে এমপি ফারুক চৌধুরীর মতো আদর্শিক হেভিওয়েট নেতৃত্বের পরাজয় ঘটেছে। যেখানে নৌকা প্রতিক নিয়ে ফারুক চৌধুরীর মতো হেভিওয়েট নেতৃত্বের প্রায় ৬ হাজার ভোটে পরাজয় হয়। সেখানে নৌকাবিহীন উপজেলা নির্বাচনে লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না কিভাবে বিজয়ী হবে, যদি বিজয়ী হয় তাহলে এমপির রাজনৈতিক দুরদর্শীতা ও জনপ্রিয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে। এতে প্রমাণ হবে এমপি ও নৌকা প্রতিকের থেকেও বেশী জনপ্রিয় ময়না,নয় তো সংসদ নির্বাচনে তিনি বা তারা নৌকার পক্ষে আন্তরিকতার সঙ্গে ভোট করেননি এটাই বাস্তব সবার কাছে স্পস্ট হবে ?
আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতাকর্মীরা বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ময়নার বিজয় হলে, আগামিতে এমপির রাজনীতি বা জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এটা তারা কখানোই মেনে নিতে পারবেন না। আবার অনেকে বলছে, দলীয় প্রতীক উঠিয়ে দেয়ায় নির্বাচনী আমেজ হয়েছে ভিন্ন। ময়না জনপ্রিয় নেতা সেটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নাই সবাই স্বীকার করেন। তবে তার জনপ্রিয়তার বারোটা বাজিযেছে তার অনুগত কতিপয় গভীর নলকুপ অপারেটর-কথিত সভাপতি ও অনুপ্রবেশকারি শিক্ষক নেতা। যারা পারিবারিকভাবে জামায়াতের রাজনীতির সঙে সম্পৃক্ত। অথচ হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা।এদের কারণে ভোটের মাঠে ময়নার জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। এসব অপারেটরের জুলুম-নির্যাতন ও অত্যাচার সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাদের হাত থেকে পরিত্রাণের আশায় সাধারণ মানুষ ময়নার বিকল্প নেতৃত্বের দিকেই ঝুঁকছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কাঁচি-হাতুড়ি ইত্যাদি বিশষণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা ও একটি বিশেষ পক্ষের লোক চিহ্নিত করে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। মানুষ যখন ডুবে যায় তখন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চাই। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চিত নেতাকর্মীরা এবার মামুনকে খড়কুটো বিবেচনা করে তাকে ধরেই বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে তৃণমুলের মতামত ও ভোটারদের মানসিকতা বিবেচনা করে দেখা গেছে বিজয়ী হবার দৌড়ে মামুন অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। কারণ নির্বাচনের মুলমন্ত্র গণ-সংযোগে যেখানে মামুন এগিয়ে, সেখানে ময়নার কর্মী-সমর্থকেরা ফেসবুক প্রচারণায় ব্যস্ত।
এছাড়াও চেয়ারম্যান ময়নার বিরোধীতা করে মামুনের সঙ্গে প্রকাশ্যে মাঠে সরব স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একাধিক জৈষ্ঠ নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ। ওদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনীতির মাঠে চেয়ারম্যান ময়নার কিছুটা ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে তার আগের সেই জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। যে কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী তাঁর বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে মামুনে ঝুঁকছেন। স্থানীয়রা বলছে, বর্তমানে ভোটের মাঠের যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে কলমা, বাধাইড় ও চাঁন্দুড়িয়া ইউপিতে এমপি অনুসারীরা এগিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে তানোর এবং মুন্ডুমালা পৌরসভা, তালন্দ, সরনজাই,পাঁচন্দর ও কামারগাঁ ইউপিতে এমপিবিরোধী অনুসারীরা এগিয়ে রয়েছে। এমপিবিরোধী শিবিরে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুস সালাম, তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র ইমরুল হক,প্যানেল মেয়র আরব আলী,মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান,কলমা ইউপি চেযারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও পাঁচন্দর ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক বিজেন কর্মকারপ্রমুখ।
যাদের নিজস্ব একটা জনসমর্থন বা ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার প্রমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে।এমপিবিরোধীদের দাবী রাজনীতিতে তাদের অস্থিত্ব ধরে রাখতে মামুনের বিজয় ব্যতিত কোনো বিকল্প নাই বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোটে আসবে কি না তা নিয়ে এখনি মুখ খুলছেন না। তবে তারা কখানোই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিবেন না।বরং মামুনের পক্ষে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। এটা হলে আওয়ামী লীগের একাংশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ভোট যোগ হলে মামুনের বিজয় প্রায় নিশ্চিত। এদিকে উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ময়নার শীতল সম্পর্ক নেতাকর্মীদের মনে অজানা আতঙ্কের সুত্রপাত হয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।#