গোদাগাড়ী ( রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী গৌরাঙ্গবাড়ি খেতুরীধামে ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী মহোৎসব পরিদর্শন করলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অবঃ) মেজর জেনারেল মো: শরীফ উদ্দিন।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টার সময় তিনি খেতুরী ধাম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে শরীফ উদ্দিন গৌরাঙ্গদেব ট্রাষ্ট বোর্ডের ট্রাষ্টিদের ও অগত ভক্তদের সাথে মত বিনিময় করেন এবং ভক্তদের সকল সুযোগে সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ সকল বিষয়ে খোঁজ খবর নেই। নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব তিথি উপলক্ষে ৩ দিন ব্যাপি মহোৎসব শুরু প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ি (শ্রীপাট খেতুরীধামে) নেমেছে ভক্তদের ঢল। দুই দিন আগে হতেই দেশের দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা এসে আপন আপন থাকর জায়গা করে নিয়েছে।
গোরাঙ্গবাড়ীর নির্ধারিত জায়গায় ছাড়াও রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন পসরার দোকান সাজিয়ে জমে উঠেছে খেতুরীধামে মহোৎসব। সারা দুনিয়ায় বৈষব ধর্মের অনুসারীদের পাঁচটি ধাম রয়েছে। এরমধ্যে চারটিই ভারতবর্ষে। বাংলাদেশের একমাত্র ধাম এই খেতুরে। তাই বাংলাদেশের সনাতন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীদের কাছে এর গুরুত্ব অনেক। দেশের আর কোথাও বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীদের এত বড় জমায়েত হয় না।
শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপি এই মহোৎসব। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান হয়। আজ শনিবার অরুনোদয় থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী চলবে তারকব্রহ্ম নাম সংকীর্ত্তন। রবিবার প্রভুর ভোগ মহোৎসব, দধিমঙ্গল ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিরোভাব তিথি মহোৎসব । ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনি শক্ত রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী ও সেচ্ছাসেবকরা সবসময় নিরাপত্তার দ্বায়িতে পালন করছে। শ্রীপাট খেতুরীধাম এলাকায় ১২ টি সিসিক্যামেরা স্থাপন করা আছে।
এছাড়াও বক্তদের জন্য ১০০ টি স্থায়ী টয়লেট ও ১০০ টি ভ্রাম্যমান টয়লেট, পানির জন্য ১০ টি সাব মার্সিবল পাম্প ও ১ গভীর নলকুপ বসানো আছে। ভক্তদের জন্য সকল সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রীষ্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত ও বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মাতীরস্থ গোপালপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী।
গোপালপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল চূড়ামণি লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি গোদাগাড়ীর খেতুরী গ্রামে আসেন। খেতুর মন্দিরে স্থাপনা গড়ে তোলেন এবং সেখানে উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেন। ১৬১১ খ্রীষ্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন। শিষ্যগণ তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়। সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন। এরপর থেকেই যুগ পরস্পরায় দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধক ঠাকুর নরোত্তম দাসের কৃপা লাভের আশায় খেতুরী ধামে বার্ষিক মিলিত হয়ে।#