# শাহীনুর হাসান…………………………………………………..
করোনা ভাইরাস মহামারি দেশে বিস্তর অসমতার বিষয়টি সামনে তুলে এনেছে। কেউ এক বেলা খেতে পাচ্ছে আবার অনেকেই খেতে পাচ্ছেনা, খেটে খাওয়া মানুষদের আহাজারী এখন বিপদজ্জনক পর্যায়ে। যেকোন সময় বিপর্যয় ঘটাতে পারে। আমরা সবাই এ নৌকার মাঝি; অতএব সবার জন্য সমান সুযোগ, সবার মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নতুন সামাজিক তত্ত¡ প্রয়োগের মাধ্যমে এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সঠিক পদক্ষেপে করোনা ভাইরাসের এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে নতুন খবর ‘দুর্নীতির অভিনবত্বে’ বিশে^র সেরা এখন বাংলাদেশ।
পৃথিবীর সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সোমালিয়া প্রসিদ্ধ। তাদের হাসপাতাল থেকে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী চুরি হয়ে তা খোলা বাজারে পাওয়া যায় খুব সহজে। করোনা পরীক্ষার জন্য নি¤œমানের কীট কেনার দায়ে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরখাস্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত সবদেশেই করোনা মহামারির আতংকের মধ্যেও লোভী মানুষের কুকীর্তির খবর মাঝে-মধ্যেই শিরোনাম হয়েছিল। কিন্তু সবকছিুকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইম্সে শিরোনাম হয়েছিল, ‘বিগ বিজনেস ইন বাংলাদেশ; সেলিং ফেক করোনা ভাইরাস সার্টিফিকেট’। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশে বড় ব্যবসা: করোনা ভাইরাসের ভুয়া সনদ বিক্রি’। যেটা এযাবৎ কেউ কল্পনাও করেনি, সেটা করে দেখিয়েছে আমাদের দেশ। ঐ ভুয়া সনদ বিক্রেতা হাসপাতাল সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে কাজ করেছে।
উক্ত চুক্তি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং এবং অন্যান্য সচিবগণের ছবি পত্রিকায় এসেছে। অথচ ইতিপূর্বে মন্ত্রী বা তার দপ্তর এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলেছিলেন। ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর মন্ত্রী আস্ফালন করে বলেছেন, দৈনিক এরূপ অজ¯্র চুক্তিতে আমরা সই করে থাকি; কিন্তু পড়ে দেখি নাকি?
দেশের দুর্ভাগ্য যে, হাজার হাজার অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন অ-ডাক্তাররা। জানিনা মন্ত্রী নির্বাচনে ও পরিবর্তনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতটুকু? ছয় হাজার ভুয়া সার্টিফিকেটদাতা হাসপাতালের তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর আরও কয়েকটি ভুয়া সনদদাতা হাসপাতালের খবর শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু এইসব হাসপাতালের অনুমোদনদাতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কোন শাস্তি হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরখাস্ত হননি; বরং তার আস্ফালন বেড়েছে। মন্ত্রীরা বিদেশী কীট ও ভেণ্টিলেটর কেনায় উৎসাহী হয়েছিল কেন? কারণ সবাই জানেন। অথচ দেশেই ‘গণস্বাস্থ্য’ কীট বানালো, কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হলোনা। যদিও তাতে লাভ ছিল জনগণের।
যারা অতি সুলভ মূল্যে এমনকি বিনা মূল্যে সেগুলো পেত। ইউক্রেন ও কম্বোডিয়ার মত ছোট ছোট দেশগুলো তাদের সরকারী ক্রয় পণ্যের নাম, দাম, কেনাকাটার শর্ত এবং সরবরাহকারীদের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করে। আরও কয়েকটি দেশ তাদের অনুসরণ করে দুর্নীতি কমাতে সফল হয়েছে। বাংলাদেশের কী সে সাহস আছে?
গোটা দেশের শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে অতিসত্বর পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে, কারণ মানুষ আর পেটের ক্ষুধায় থাকতে পারছেনা; নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি।
টিসিবি, ওএমএসের পণ্য যদি সঠিক ভাবে বিক্রয় করা যেত, কিন্তু সেটাও সফল ভাবে হচ্ছে না, কারণ অপরিণামদর্শী জনপ্রতিনিধি ও শাসকদের কারনে। দুর্বলদের উপর সবলদের অত্যাচার পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সর্বদা পুকুরচুরি হচ্ছে। যে কথা প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জাতীয় সংসদে বলেছেন, সেটিই চলছে গণতন্ত্রের মানসপুত্রদের মাধ্যমে।
রিজেণ্ট-জিকেজি-সাহবুদ্দিন, সাবরিনা-আরিফ প্রমুখ করোনার ভুয়া সনদ দাতা হাসপাতালের নায়করা কি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট নয়? দ্বিদলীয় সরকার ও জোট দেশ চালাচ্ছেন স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫০ বছর ধরে। এর মধ্যে ডজন খানেক রেলমন্ত্রী এলেন ও গেলেন। কিন্তু এখনও সারা দেশে রেলের প্রায় ৮হাজার একর জমি ঊদ্ধার হয়নি কেন? কারা এগুলো দখলে রেখেছেন? ঢাকার নাভি বলে খ্যাত বুড়িগঙ্গা এখন বিষাক্ত পানির ভাগাড় কেন হ’ল? মাত্র ৬৩ মি.মি. সাধারণ বৃষ্টি বর্ষণে রাজধানী ঢাকা তলিয়ে যাচ্ছে কেন?
বালু ও তুরাগ নদীর অববাহিকায় অপরূপ সৌন্দর্যের আধার আশুলিয়া ভরাট হয়ে গেল কেন? একই অবস্থা প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরের। যখন যারাই ক্ষমতায় এসেছে, এসব তো তাদেরেই অপকর্ম। বন্যায় ছিন্নমূলদের উপর কিভাবে এনজিওদের কিস্তি আদায়ের যুলুম চলছে, গ্রামের শোষক দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে মানুষ কিভাবে ভিটা ছাড়া হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিরা কি তা দেখতে পাননা? হেন কোন অপকর্ম নেই, যা বুক ফুলিয়ে করছেনা ওই সমস্থ ব্যক্তিরা। তাহ’লে প্রশাসন কিজন্য? দুর্বল ও অসহায়রা তাহ’লে যাবে কোথায়? অথচ সর্বদা গণতন্ত্রের মধুবর্ষণ চলছে। মূলতঃ গণতন্ত্রে বা বর্তমান অবস্থার যে মৌলিক গলদটি রয়েছে সেটি হ’ল তাদের নিকটে সত্য-মিথ্যার কোন মানদন্ড না থাকা এবং নিজেদেরকে কৈফিয়াতের উর্ধ্বে মনে করা।# ( লেখক একজস সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট)