সাংবাদিক মোঃ আলফাত হোসেন...............................................................
বর্তমানে দেশের বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্য-তেলের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এখন হতাশাগ্রস্ত, ক্ষুব্ধ। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি।
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে এই দেশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের কথা চিন্তা না করে যারা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, আলিঙ্গন করেছেন মৃত্যুকে।
আর যারা এখনও বেঁচে আছেন তারা যে এক বুক হতাশা নিয়ে দিনানিপাত করছেন, তাদের বুকে যে প্রতি মূহুর্তে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বুঝতে পারছি, বড় বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ঘটনা শুনে, ইতিহাস পড়ে, দেখে। এমন বাংলাদেশ কি দেখতে চেয়েছিলেন তারা।
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সামনে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা, কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি। কোনো দল কি জনগণের ভালোর জন্য রাজনীতি করছে ! জনগণের মতামতের ধার ধারছে?
যারা মনে করে যে, সভায় লোক সমাগম মানেই জনমত তার পক্ষে আর পয়সা খরচ করলেই জনস্রোত বইয়ে দেওয়া যায়, যারা বিশ্বাস করে ম্যাডাম বা নেত্রী না চাইলে কেউই আমাকে সরাতে পারবে না, তাহলে কি তারা জনগনের কল্যাণের কথা ভাববেন! তাহলে কার জন্য রাজনীতি বা রাজনীতিই বা কি!
ছোটবেলা থেকে শুনেছি ‘রাজনীতি’ হলো রাজার নীতি অর্থাৎ রাজা যে নীতি তৈরি করেন তাই রাজনীতি। বড় হবার সাথে সাথে বুঝলাম রাজার ইচ্ছার নীতিই রাজনীতি নয় এই নীতি অবশ্যই হতে হবে জনকল্যাণের জন্য অর্থাৎ জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য রাজা কর্তৃক অনুসারিত নীতি হলো রাজনীতি।
আর নীতির সাথে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও ন্যায়বোধের সমন্বয় থাকতে হবে। কিস্তু আমরা কি দেখছি, রাজনীতিতে আর নীতি নেই বা থাকলেও তা হলো দুর্নীতি এবং ব্যবসা।
আর তাই রাজনীতিবীদগণ চান যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে বা থাকতে । এর ফলাফল অবোরোধ, হরতাল, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ,বৃক্ষ নিধন, রেলপথের ফিশ-প্লেট সরিয়ে ফেলা, চোরাগোপ্তা হামলা। আর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মৃত্যু-অগ্নিদগ্ধ শিশুর আহাজারি-মায়ের কান্না-ভাইয়ের আর্তনাদতো আছেই।
আন্দোলনের নামে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট যে অবরোধ, হরতালের ডাক দিয়েছে তাতে পেট্রোল বোমা হামলা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ নানান ধরণের নাশকতায় পুলিশ, সাংবাদিক, শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে দুর্বৃত্ত সহ সাধারণ মানুষ ও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
খবরে বলা হচ্ছে, প্রতিদিনই রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই,মানুষকে চলাফেরা করতে হচ্ছে প্রাণ হাতে নিয়ে ,সাধারণ জনগনের প্রতিটি মূহুর্ত কাটছে আতংকে।
সরকার বলছে সবকিছুই স্বাভাবিক হবে কিন্তু এর মধ্যে আহত-দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে আহাজারি করছে অসংখ্য মানুষ, স্বস্তি বা শান্তিতে নয় বেঁচে থাকার অধিকারটুকু আজ ভুলন্ঠিত। এমন নৃশংসতার মানে কী? পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল বা উপাদান হিসবে ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না, এমন হিংস্রতা জঙ্গি হামলা ছাড়া কিছু নয়।
রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত রাজনৈতিকভাবেই; মানুষ পুড়িয়ে নয়; এমন অবস্থা চলতে থাকলে রাজনীতিবীদদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকবে না যা ইতিমধ্যে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে।
জনগণ ভাবতে শুরু করেছে-যারা স্বার্থের রাজনীতি করে, তাদের কাছ থেকে কীই-বা আশা করা যায়? দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য ত্যাগের মানসিকতা কারও নেই। একদল পোড়ায়, একদল মলম লাগায়,কী লাভ তাতে? নির্বাচনের আগেও মানুষ পুড়ে মরতেছে,ক্ষমতা নিয়ে মারামারি হচ্ছে আর আমরা হচ্ছি বলির পাঠা।
এসব মৃত্যুর দায় কে নেবে? পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর দিন কিভাবে কাটছে, আগত দিন কিভাবে কাটবে অবরোধ ঘোষণাকারীরা কি একবার ভেবে দেখেছেন?
দেশজুড়ে যে চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার দায় কার? অবরোধের নামে দেশজুড়ে নৃশংসতা ও নাশকতা চালিয়ে সর্বগ্রাসী আতঙ্ক সৃষ্টিই যদি রাজনৈতিক কৌশল হয়, তাহলে অনুরোধ, এই কৌশল ত্যাগ করুন। নাশকতা-নৃশংসতা কোনো রাজনৈতিক আচরণ নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে হবে।
যে কর্মসূচিতে জনগণের প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তা বলে কিছু থাকে না, সে ধরনের কর্মসূচি রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল হতে পারে না।
দোহাই আপনাদের শান্তি না হোক,স্বস্তি দিতে না পারেন, অন্তত বাঁচতে দিন বাংলাদেশের মানুষদের।
অনেক হয়েছে, কেন শুধু শুধু হতভাগা গরিবের পেটে লাথি মারা, এমনিতেও তো বেঁচে থেকেও আধমরা এ জনগণ। জনগণ এখন শুধু বাচঁতে চায়, দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে চায়।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রোকনুজ্জামান রোকন নির্বাহী সম্পাদক: ইফতেখার আলম সম্পাদক কর্তৃক উত্তর নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল: ০১৭১১-২০৮ ১৭২, ০১৮৩৪-৮৬১ ০০৭ ইমেইল: [email protected]
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ নগর