কামাল উদ্দিন টগর: নওগাঁর আত্রাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কামারের দোকানগুলোর টুংটাং শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। নাওয়া-খাওয়া ভূলে গিয়ে অবিরাম কাজ করছেন তারা। আগুনের শিখায় লোহা পুড়িয়ে তৈরি করা হয় এসব ছুরি, দা, বঁটি,চাপাতি। পশু কোরবানির পাশাপাশি মাংস কাটার জন্য। এসব কিনতে কামারের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ক্রেতাদের অভিযোগ, এবছর এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা,ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা এখন বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটার শব্দ। লোহার হাতুড়ি পেটায় ছড়াচ্ছে সফুলিঙ্গ। সেখানে যেন দিন-রাত, অবিরাম চলছে কাজ আর কাজ।কামাররা জানান, বছরের এগারো মাসে তাদের ব্যবসা হয় এক রকম আর কোনবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম।
উপজেলার কয়েকজন কামারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, স্প্রিং লোহা {পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো,দাম ও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামুলক ভাবে কম এ্যাঙ্গেল, রড, স্টিং, রেলরাইনের লোহা, গাড়ির পাত ইত্যাদি অনেকে লোহা কামাদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহা ভেদে নির্দ্ধারন করা হয়। বেশির ভাগ কামারদের কাছ থেকেই লোহা কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে বা রেডিমেট বানানো জিনিস নিয়ে যায়।
কামাররা জানান, লোহারর মানভেদে একটি দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা (পাকা লোহা) আর কাঁচা লোহার দা ৫০০ থেকে ৩ হাজার, কুড়াল ৬০০ থেকে ১১শ,বটি ৩০০ থেকে ৮০০,চাপাতি ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।তবে দেশিয় এসব দা-বটির পাশাপাশি চায়না থেকে আমদানি করা বিভিন্ন মান ও আকারের ছুরি-চাপাতিও বাজারে অল্প দামে বিক্রি হচ্ছে।
আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর গ্রামের লিটন মহন্ত জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা।বাপ দাদার পৈত্রিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝাড়ি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।সারা দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থে এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে আমার কাজের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সারা বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালোই হতো।তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পেশায় যারা জড়িত তাদের ঘুড়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।#