মোঃ মিজানুর রহমান, খুলনা: সরকারি স্কুলের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দীর্ঘ দিনের নিয়মতান্ত্রিক ও ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবিদাওয়ার ব্যপারে কোন সাড়া না পেয়ে এবার কর্মবিরতির মতো কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার কর্মরত পেশাজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি মাধ্যমিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ শিক্ষকগণের আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পর এবার অনন্যোপায় হয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দীর্ঘদিনের চলমান বঞ্চনা, বৈষম্য এবং বকেয়া আর্থিক সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষকগণ সমিতির ব্যানারে দাবি আদায়ে আন্দোলনের পথে নামছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক নেতা।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এবং স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে যে দাবি জানিয়ে আসছেন তা হলো: ১) এন্ট্রি পদ ৯ম গ্রেড ধরে চার স্তরীয় পদোসোপান প্রবর্তন পূর্বক মাধ্যমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন। ২) সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল / সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ প্রদান ও এডভান্স ইনক্রিমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন। ৩) বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ পদোন্নতি ও পদায়ন। ৪) সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা জেলা শিক্ষা অফিসার পদে প্রকল্প থেকে আগত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদায়নের উদ্যোগ বন্ধ করা এবং আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষা।
আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পূরণ করার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলে এ ব্যাপারে নেতৃবৃন্দ সরকার তথা মন্ত্রণালয়কে তিন কার্যদিবসের সময় দিতে চান অন্যথায় তাঁরা চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শন, খাতা মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতকরণ ও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বর্জনের মতো বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য দেশের সাত শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রায় ২ সহস্রাধিক শিক্ষক ১৫ বছরের অধিক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত, এছাড়া তিন শতাধিক প্রধান শিক্ষক, পাঁচ শতাধিক সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছেন এমন শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালিয়ে নিলেও তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না! এদিকে ৩৩ জেলায় জেলা শিক্ষা অফিসার এবং প্রায় সব জেলাতেই সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের পদ শূন্য পড়ে আছে। ফলে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসন মারাত্মকভাবে সংকটে পড়েছে।
তাই যৌক্তিক কারণেই সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক পদের ৯ম গ্রেড ক্যাডার মর্যাদার দাবি দীর্ঘদিনের। আবার সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সুনির্দিষ্ট চার স্তরীয় একাডেমিক পদসোপান থাকলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নেই কোনো একাডেমিক ক্যারিয়ারপাথ! ফলে ৯৭% শিক্ষক যেই পদে যোগদান করেন, সেই পদে থেকেই অবসরে যান! অন্যদিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক ১৫-২০ বছর চাকরি করেও তাদের বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাননি! অন্য সেক্টরে সবাই পেয়ে গেলেও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও আট মাস ধরে মঞ্জুরি দেশ দেওয়া হচ্ছে না! ফলে আর্থিক টানাপোড়েনে শিক্ষকগণ বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে মানবতর জীবন যাপন করছেন!
মাঠপর্যায়ের শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছেন—৩০ নভেম্বরের মধ্যে সমাধান না হলে কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়াই ‘No time scale–selection grade, No work’ কর্মসূচি শুরু করবেন তাঁরা।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রোকনুজ্জামান রোকন নির্বাহী সম্পাদক: ইফতেখার আলম সম্পাদক কর্তৃক উত্তর নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল: ০১৭১১-২০৮ ১৭২, ০১৮৩৪-৮৬১ ০০৭ ইমেইল: dainiksobujnagar@gmail.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ নগর