# মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি................................................................
যশোরের অভয়নগরে শিল্প শহর নওয়াপাড়াসহ উপজেলার রাজঘাট থেকে প্রেমবাগ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টারী। যে সব মিল ফ্যাক্টারী গুলোতে বাংলাদেশ শিশু শ্রম আইন লংঘন করে শিশুদের দিয়ে মিল ফ্যাক্টারীর শ্রমিকের কাজ করানোর অভিযোগ থাকলেও বিভিন্ন কারণে মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়না কোন আইনগত পদক্ষেপ। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে শ্রম আইন লংঘনের মতো নারকীয় ঘটনা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টারীতে ৯/১০ বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয় যা শিশু শ্রম আইনের পরিপন্থী হলেও অজানা কোন কারণে ওই সব মিল ফ্যাক্টারীর মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়না কোন আইনগত পদক্ষেপ। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু শ্রম। ওই সব মিল ফ্যাক্টারীতে যদি কখনো কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রবেশ করে তার আগে শিশু বাচ্চাদের নিজেদের সংরক্ষণকৃত স্থানে লুকিয়ে রাখা হয় বলে একাধিক মিল শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
অনেকে বলেছেন মিল গুলোতে আমরা কাজ করি ছোট ছোট ফুটফুটে শিশুদের কষ্ট করা দেখে, আমাদের অনেক খারাপ লাগে। কিন্তু কাজ হারানোর ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারিনা। অথচ বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা ৩৫ ধারা অনুযায়ী কোন শিশুর মাতা-পিতা বা অভিভাবক শিশুকে কোন কাজে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করে কাহারও সহিত কোন চুক্তি করিতে পারিবেন না৷ ব্যাখ্যাঃ এই ধারায় "অভিভাবক" বলিতে শিশুর আইনগত হেফাজতকারী বা শিশুর উপর কর্তৃত্ব আছে এমন যে কোন ব্যক্তিকেও বুঝাইবে৷ ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবেনা।
বাংলাদেশের সংবিধান শিশুসহ সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য রয়েছে আইনও। আর ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কর্মঘণ্টা এবং শিশুকে দিয়ে কী কী কাজ করানো যাবে বা যাবে না তাও বলা আছে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বই থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ আর কিশোরদের বয়স ১৪-১৮ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারো সাথে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবে না।
কিশোর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কাজে নিয়োগ করতে হলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছ থেকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে যেটার খরচ বহন করতে হবে মালিককে। কিশোর শ্রমিকদের স্বাভাবিক কাজের সময় হবে ৫ ঘণ্টা, আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত তাদের দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। এই আইনে আরো বলা হয়েছে, ১২ বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে সেই কাজগুলোই করানো যাবে যেগুলো তাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না এবং শিক্ষা গ্রহণের অধিকার বিঘ্নিত করবে না। জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১০-এ শিশুশ্রম বিলোপে কতগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে শিশুশ্রম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই সনদে বলা হয়েছে, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো শিশুশ্রমের জন্য বয়স, বিশেষ কর্মঘণ্টা ও নিয়োগে যথার্থ শর্তাবলী নির্ধারণ করবে। এছাড়াও শিশুর সুরক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছে যা পরোক্ষভাবে শিশুশ্রম নিরসনে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ এই সনদে ১৯৯০ সালে স্বাক্ষর করেছে।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: রোকনুজ্জামান রোকন নির্বাহী সম্পাদক: ইফতেখার আলম সম্পাদক কর্তৃক উত্তর নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী-৬২০৩ থেকে প্রকাশিত। মোবাইল: ০১৭১১-২০৮ ১৭২, ০১৮৩৪-৮৬১ ০০৭ ইমেইল: [email protected]
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ নগর