# বিশেষ প্রতিনিধি……………………………………………………………………..
ব্যবসার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশে, আড়ানি পৌরসভার গত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কিছু ভোটের ব্যবধানে পারজিত হয়েছিলেন রাজশাহী বাঘার আড়ানির মাংস ব্যবসায়ী মামুন হোসেন। ছুরিকাঘাতে নিহত মামুনের আয়ে চলতো ৫ (পাঁচ) সদস্যের পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম সেই মামুনকে হারিয়ে কান্না থামছেনা পরিবারের। হতবাক মাংস ব্যবসায়ী মামুনের পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (২২-০১-২০২৪) নিহত মামুনের বাসায় গিয়ে হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। তার ৬০ বছরের মা আকলিমা বেগম ও স্ত্রী ময়না বেগমের (৩০) কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। তারা বারবার আহাজারি করছিলেন, এখন আর দেখার কেউ রইল না। মামুনের আয়েই চলত তাদের সংসার। এ সময় চার বছরের অবুঝ শিশু মাহিমা এবং ১৬ বছরের ছেলে মাহিম উদ্দীনও মায়ের কান্না দেখে কাঁদছিলেন। ছেলে মাহিম উদ্দীন জানান, আগে তার বাবা ও খোকন একসঙ্গে মাংসের ব্যবসা করতেন। খোকন মাদকসেবী হওয়ায় তার বাবার সঙ্গে প্রায় বিবাদে জড়াতেন। এ জন্য তার বাবা ব্যবসা আলাদা করে নেন। পৃথক ব্যবসা খুলে শনিবার আড়ানির পেওর হাট-বাজারে ৬৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছিলেন তার বাবা মামুন। আর খোকন বিক্রি করছিলেন ৭০০ টাকা দরে।
মাহিম উদ্দীন বলেন, ৬৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি করলেও কেজিতে ৫০ টাকার মতো লাভ থাকে। বাবা কেজিতে ৫০ টাকা দাম কমানোর পর দোকানে ভিড় লেগে যায়। অন্যদিকে খোকনের বিক্রি কমতে থাকে। এই ক্ষোভে শনিবার সকালে বাবাকে গালাগালের একপর্যায়ে ঘুসি মেরে ফেলে দেন খোকন। তাকে সরিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে গরু কাটার ছুরি দিয়ে বাবাকে আঘাত করতে থাকেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাবা মারা যান।
মামুনের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, শোক সামলাবার আগেই তাঁকে এখন ভাবতে হচ্ছে ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন। তাদের সহায়-সম্বল বলে কিছুই নেই। ১০ কাঠা মাটির ভিটে একমাত্র সম্বল। এই ভিটেতে ভাত হয় না। মামুনের মাংস ব্যবসার আয় থেকেই সংসার চলত। নিহত মামুনের মা আকলিমা বেগম ছেলে হত্যার ন্যায্য বিচার এবং খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। নিহত মামুন আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া গ্রামের মৃত খোদা বক্সের ছেলে। আর খুনি খোকন একই গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, আড়ানি পৌরসভার গত নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কিছু ভোটের ব্যবধানে পারজিত হয়েছিলেন মাংস ব্যবসায়ী মামুন হোসেন। ব্যবসার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশ ছিল তার। জনপ্রতিনিধি হতে না পারলেও ব্যবসায় মাংসের দামের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে কেজিতে ৫০ টাকা কমে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন তিনি । বিষয়টি মানতে পারেননি মাদকসেবী মাংস ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান খোকন। শনিবার সকালে ছেলে মাহিম উদ্দীনের সামনেই ব্যবসায়ী মামুন হোসেনকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন খোকন।
এলাকাবাসী জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মামুন। তিনি চেয়েছিলেন, মাংসের দাম কিছুটা কমিয়ে ভোক্তার নাগালে রাখতে। এটা সহ্য করতে পারেননি অধিক মুনাফালোভী খোকন। এই ক্ষোভ থেকেই তাকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। আড়ানি পৌর আ’লীগের সহ সভাপতি হানুফা নাছিম বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনগণ। তার ভাষ্য, শুধু মাংসেরই নয় কোন দ্রব্য মূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই।
আড়ানী পৌরসভার কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান রানা বলেন, তারা সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করেও পারছেন না। কেউ ভাঙতে গেলে খুন হতে হচ্ছে। প্রায়শঃ ক্রেতাদের সাথে বাক বিতন্ডা হচ্ছে।
আড়ানি পৌর বাজারের সাবেক সভাপতি সনদ ত্রিবেদী বলেন,জনগনের ভোগান্তি কমাতে দ্রব্য মূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রন জরুরি। বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহত মামুনের ভাই মানিক হোসেন বাদী হয়ে মিজানুর রহমান খোকনসহ ৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ আব্দুস সালাম নামে খোকনের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে। খোকন পলাতক রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।#